ঢাকা ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

৭ জানুয়ারি নির্বাচনে কী হবে.?

অনেক আগে রাশিয়া বিষয়ক একটা কৌতুক শুনেছিলাম। কৌতুকটার পুরো অংশ মনে নেই, শুধু দুইটা অংশ মনে আছে। রাশিয়ায় ভ্রমণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বলা হচ্ছে, রাশিয়ার খাবারের স্বাদ ও বৈচিত্র্য অপূর্ব, রেস্টুরেন্টের মেন্যুতে আপনি পাবেন বাঁধাকপির স্যান্ডউইচ, বাঁধাকপি ভাজি, বাঁধাকপি সেদ্ধ, বাঁধাকপির সালাদ ইত্যাদি। খাবারের আইটেম যাই হোক, সবই বাঁধাকপি।

বাঁধাকপি সবজিটা খারাপ না, কিন্তু তাই বলে শুধু বাঁধাকপির মধ্যেই আপনাকে খাবার পছন্দ করতে হবে। খাবারের আইটেম আছে নানারকম, কিন্তু সবই বাঁধাকপি। রাশিয়া প্রসঙ্গে এটা নিতান্ত কৌতুক মাত্র, সোভিয়েত আমলে এইরকম কৌতুক তৈরি হতো আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের নানা কেন্দ্রে আর সেইগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হতো সারা দুনিয়ায়।

ওদের উদ্দেশ্য ছিল সমাজতন্ত্র যেভাবে জনপ্রিয় হচ্ছিল সারা দুনিয়ায় তা বন্ধ করা। এইসব ঠাট্টা আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু আপনার সাথে যদি কেউ এই কৌতুক করে, এমনি মুখে মুখে ঠাট্টা নয়, বাস্তবে সিরিয়াস বিষয় নিয়ে তখন আপনার কেমন লাগবে?

এইরকম একটা ঠাট্টা কি আমাদের সাথে চলছে না? জানুয়ারির সাত তারিখে একটা সাধারণ নির্বাচন হবে। ৩০০টি আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচনের উদ্দেশ্যে প্রার্থীদের নাম, তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। নির্বাচনের প্রচার চলছে, প্রার্থীরা নানা কায়দায় ভোট চাইছে, ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। কিন্তু প্রার্থী কারা?

আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১৪ দলের নৌকা মার্কার প্রার্থী, আওয়ামী লীগের অনুগত ১৪ দলের নানা মার্কার প্রার্থী, আওয়ামী লীগের পছন্দকৃত জাতীয় পার্টির প্রার্থী, আওয়ামী লীগের পছন্দকৃত নয় তবে আওয়ামী লীগের অনুগত জাতীয় পার্টির প্রার্থী, আওয়ামী লীগের অনুমোদিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রিত অনেকগুলো ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের প্রার্থী।

প্রার্থীদের যে মেন্যু, তা মোটামুটি বাঁধাকপিরই মেন্যু, তবে আপনার সামনে অনেক বিকল্প রাখা হয়েছে। একে কী রকম নির্বাচন বলবেন আপনারাই ভালো জানেন,

৭ তারিখ ঘটনা ঘটে যাবে। সন্ধ্যার সময় দেশের জনগণ টেলিভিশন খুলে নির্বাচনের ফলাফল দেখা শুরু করবে, যার যার পরিচিত যে প্রার্থী আছে ওদের মধ্যে কে জিতল আর কে হারল সেই খবর জানতে চাইবে। না, কেউই নিরাশ হবে বলে মনে হয় না। নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছেন—ভোটার হিসাবে বা প্রার্থী হিসাবে—ওদের প্রায় সকলেই এর মধ্যেই জানেন কোন আসনে কোন প্রার্থী জিতবে আর কারা হারবে।

প্রায় বলছি তার কারণ আছে। যে চিত্রনাট্যের কথা আমরা বলছি, সেইটা পুরোটা কাজ করবে না। কয়েকটা আসনে দেখা যেতে পারে যে যাদের জয় নিশ্চিত বলে ভেবেছিলেন আপনারা, ওদের দুই-একজন সম্ভবত হেরে যাবেন এমন সব প্রার্থীদের কাছে যাদের পরাজয় নানাভাবেই নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়েছে।

কোথায় হবে এই রকম অবস্থা? যেসব আসনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির অনুকূলে নিজদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে সেইসব আসনে এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে এমন কয়েকটা আসনে। এবং যত বেশি মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবেন ততই চিত্রনাট্য এলোমেলো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

মানুষ কি দল বেঁধে সাত তারিখে ভোটকেন্দ্রে যাবে? হয়তো যাবে। বর্তমানে মাঠে যত প্রার্থী আছেন, মেন্যুতে আপনি ওদের যত আলাদা নামেই চিহ্নিত করুন না কেন, ভোটারদের কাছে এরা সবাই একই জিনিস—সব বাঁধাকপি। সুতরাং মানুষ এর মধ্যে পছন্দ করার মতো খুব বেশি বিকল্প দেখবে না সেইটাই স্বাভাবিক-চলবে

 

 

Tag :

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Update Time : ১০:৪১:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪

৭ জানুয়ারি নির্বাচনে কী হবে.?

Update Time : ১০:৪১:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪

অনেক আগে রাশিয়া বিষয়ক একটা কৌতুক শুনেছিলাম। কৌতুকটার পুরো অংশ মনে নেই, শুধু দুইটা অংশ মনে আছে। রাশিয়ায় ভ্রমণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বলা হচ্ছে, রাশিয়ার খাবারের স্বাদ ও বৈচিত্র্য অপূর্ব, রেস্টুরেন্টের মেন্যুতে আপনি পাবেন বাঁধাকপির স্যান্ডউইচ, বাঁধাকপি ভাজি, বাঁধাকপি সেদ্ধ, বাঁধাকপির সালাদ ইত্যাদি। খাবারের আইটেম যাই হোক, সবই বাঁধাকপি।

বাঁধাকপি সবজিটা খারাপ না, কিন্তু তাই বলে শুধু বাঁধাকপির মধ্যেই আপনাকে খাবার পছন্দ করতে হবে। খাবারের আইটেম আছে নানারকম, কিন্তু সবই বাঁধাকপি। রাশিয়া প্রসঙ্গে এটা নিতান্ত কৌতুক মাত্র, সোভিয়েত আমলে এইরকম কৌতুক তৈরি হতো আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের নানা কেন্দ্রে আর সেইগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হতো সারা দুনিয়ায়।

ওদের উদ্দেশ্য ছিল সমাজতন্ত্র যেভাবে জনপ্রিয় হচ্ছিল সারা দুনিয়ায় তা বন্ধ করা। এইসব ঠাট্টা আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু আপনার সাথে যদি কেউ এই কৌতুক করে, এমনি মুখে মুখে ঠাট্টা নয়, বাস্তবে সিরিয়াস বিষয় নিয়ে তখন আপনার কেমন লাগবে?

এইরকম একটা ঠাট্টা কি আমাদের সাথে চলছে না? জানুয়ারির সাত তারিখে একটা সাধারণ নির্বাচন হবে। ৩০০টি আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচনের উদ্দেশ্যে প্রার্থীদের নাম, তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। নির্বাচনের প্রচার চলছে, প্রার্থীরা নানা কায়দায় ভোট চাইছে, ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। কিন্তু প্রার্থী কারা?

আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১৪ দলের নৌকা মার্কার প্রার্থী, আওয়ামী লীগের অনুগত ১৪ দলের নানা মার্কার প্রার্থী, আওয়ামী লীগের পছন্দকৃত জাতীয় পার্টির প্রার্থী, আওয়ামী লীগের পছন্দকৃত নয় তবে আওয়ামী লীগের অনুগত জাতীয় পার্টির প্রার্থী, আওয়ামী লীগের অনুমোদিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রিত অনেকগুলো ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের প্রার্থী।

প্রার্থীদের যে মেন্যু, তা মোটামুটি বাঁধাকপিরই মেন্যু, তবে আপনার সামনে অনেক বিকল্প রাখা হয়েছে। একে কী রকম নির্বাচন বলবেন আপনারাই ভালো জানেন,

৭ তারিখ ঘটনা ঘটে যাবে। সন্ধ্যার সময় দেশের জনগণ টেলিভিশন খুলে নির্বাচনের ফলাফল দেখা শুরু করবে, যার যার পরিচিত যে প্রার্থী আছে ওদের মধ্যে কে জিতল আর কে হারল সেই খবর জানতে চাইবে। না, কেউই নিরাশ হবে বলে মনে হয় না। নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছেন—ভোটার হিসাবে বা প্রার্থী হিসাবে—ওদের প্রায় সকলেই এর মধ্যেই জানেন কোন আসনে কোন প্রার্থী জিতবে আর কারা হারবে।

প্রায় বলছি তার কারণ আছে। যে চিত্রনাট্যের কথা আমরা বলছি, সেইটা পুরোটা কাজ করবে না। কয়েকটা আসনে দেখা যেতে পারে যে যাদের জয় নিশ্চিত বলে ভেবেছিলেন আপনারা, ওদের দুই-একজন সম্ভবত হেরে যাবেন এমন সব প্রার্থীদের কাছে যাদের পরাজয় নানাভাবেই নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়েছে।

কোথায় হবে এই রকম অবস্থা? যেসব আসনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির অনুকূলে নিজদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে সেইসব আসনে এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে এমন কয়েকটা আসনে। এবং যত বেশি মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবেন ততই চিত্রনাট্য এলোমেলো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

মানুষ কি দল বেঁধে সাত তারিখে ভোটকেন্দ্রে যাবে? হয়তো যাবে। বর্তমানে মাঠে যত প্রার্থী আছেন, মেন্যুতে আপনি ওদের যত আলাদা নামেই চিহ্নিত করুন না কেন, ভোটারদের কাছে এরা সবাই একই জিনিস—সব বাঁধাকপি। সুতরাং মানুষ এর মধ্যে পছন্দ করার মতো খুব বেশি বিকল্প দেখবে না সেইটাই স্বাভাবিক-চলবে